SSC 2016 বাতিল: সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা অযোগ্য প্রার্থীদের | সর্বশেষ রায়

SSC 2016 বাতিল: সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের | বিস্তারিত রায়

কলকাতা: ২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (WBSSC) নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। গত ৩ এপ্রিল, আদালত পুরো প্যানেল বাতিল করে দেয়, যার ফলে ২৫,৭৩৫ জন প্রার্থী চাকরি হারান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘অযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত প্রার্থীরা সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বহালের আবেদন করেন।

তবে ২০২৫ সালের ১৭ মে তারিখে সেই আবেদন সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, যাঁরা নিয়ম ভেঙে নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের আর কোনওরকম সুযোগ দেওয়া যাবে না।

বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—‘যাঁরা অতীতে নিজের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তুলেছিলেন, তাঁরা এখন নতুন করে প্রশ্ন তুলে আদালতের সময় নষ্ট করছেন।’

CBI রিপোর্ট অনুযায়ী, OMR শিট এবং কমিশনের নম্বরের মধ্যে গুরুতর অসঙ্গতি পাওয়া গেছে, যা প্রতারণার স্পষ্ট প্রমাণ। সেই কারণেই আদালত আরও জানিয়েছে—এই রায়ে হস্তক্ষেপের আর কোনো সুযোগ নেই।

মামলার মূল বিষয়বস্তু

  • ২০১৬ সালের WBSSC নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত
  • CBI তদন্তে OMR শিট ও মার্কস বিভ্রাট ধরা পড়ে
  • ২৫ হাজারের বেশি প্রার্থী চাকরি হারান
  • ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের পুনর্বহালের আবেদন খারিজ

আদালতের পর্যবেক্ষণ

বিচারপতিরা জানিয়েছেন, “আমরা পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এই নির্দেশে কেউ বিশেষ সুবিধা পাবে না। শুধু ‘যোগ্য’ প্রার্থীদেরই ডিসেম্বর ৩১ পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”

মুকুল রোহতগির সওয়াল ও আদালতের প্রতিক্রিয়া

চাকরি হারানোদের পক্ষে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী মুকুল রোহতগি। তিনি বলেন, “এই মানুষদের জীবন-জীবিকা বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁদের সুযোগ দেওয়া উচিত।”

তবে আদালতের পরিস্কার মন্তব্য ছিল, “আপনারা ‘অযোগ্য’ প্রার্থী। আমরা শুধুমাত্র যোগ্যদেরই শিক্ষকতা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছি।”

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)

প্রশ্ন: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কারা প্রভাবিত হচ্ছেন?
উত্তর: যাঁরা WBSSC 2016 নিয়োগে ‘অযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে এবং তাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না।

প্রশ্ন: ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কারা চাকরিতে থাকছেন?
উত্তর: শুধুমাত্র ‘যোগ্য’ প্রার্থীরা, যাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ বা অসঙ্গতি নেই।

প্রশ্ন: আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?
উত্তর: আদালত জানিয়েছে, ৩ এপ্রিলের রায়ই চূড়ান্ত। ভবিষ্যতে আর হস্তক্ষেপ করা হবে না।

প্রশ্ন: সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষায় কি কোনও প্রভাব পড়বে?
উত্তর: না। আদালত স্পষ্ট করেছে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই যোগ্যদের দিয়ে ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে।

© WB Educational News | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

কলকাতা: ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগে ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি বাতিলের রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট গত ৩ এপ্রিল। আদালতের নির্দেশে, “অযোগ্য” হিসেবে চিহ্নিত এই কর্মীদের বেতন ফেরত দেওয়াসহ নতুন কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে, চাকরিচ্যুতদের একাংশ আদালতের এ রায় চ্যালেঞ্জ করে নতুন নিয়োগে অংশগ্রহণ এবং এপ্রিল মাসের বেতন প্রদানের আবেদন নিয়ে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন দুটিও খারিজ করে দেয়, যা চাকরিচ্যুতদের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কেন খারিজ হলো আবেদন?
সুপ্রিম কোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ, যেখানে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন উপস্থিত ছিলেন, মামলার শুনানিতে জানায়, সিবিআই তদন্তে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন) শীট এবং কমিশনের নম্বরের মধ্যে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। ওএমআর শীটে উত্তরের চিহ্ন ও কম্পিউটারাইজড স্কোরের ব্যবধান থেকে প্রমাণিত হয়, পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীদের নম্বর বৃদ্ধি করা হয়েছিল। আদালতের মতে, “যারা নিজেদের অযোগ্য নয় বলে দাবি করছেন, তাদের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। রায় পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।” বিচারপতিরা আরও উল্লেখ করেন, “আদালতের পূর্ববর্তী রায়ের সময় সংশ্লিষ্ট পক্ষ শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। এখন নতুন করে সন্দেহ উত্থাপন করে আইনি প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করা যাবে না।”

তদন্ত ও প্রমাণের ভূমিকা:
সিবিআই-এর তদন্তে উঠে আসে, এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ওএমআর শীটে হস্তক্ষেপ, নম্বর পাচার এবং প্রার্থীদের তালিকায় অনিয়মিত পরিবর্তনের মতো গুরুতর অভিযোগ। প্রমাণাদির ভিত্তিতে, আদালত স্পষ্ট করে যে শুধু চাকরিচ্যুতিই নয়, ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম রোধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নজরদারি ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে। রাজ্য সরকারকে ডিসেম্বরের মধ্যে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পাশাপাশি এসএসসি-র কার্যক্রম সংস্কারেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষকতা নিয়ে আদালতের স্পষ্ট বার্তা:
চাকরিচ্যুতদের পক্ষে মুকুল রোহতগি যুক্তি তুলে ধরেন যে, শিক্ষকদের জীবন-জীবিকার প্রশ্নে তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে আদালত কঠোর ভাষায় প্রত্যুত্তর দেয়, “আমরা যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছি, অযোগ্যদের নয়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত।” আদালতের আগের নির্দেশ অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র যোগ্যতা প্রমাণিত শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চালিয়ে যাবেন। যাদের অযোগ্যতা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়নি, তাদেরও সাময়িকভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রাজ্যকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে বলে জানানো হয়।

শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সবার ঊর্ধ্বে:
আদালত পুনরায় জোর দিয়ে বলে, “এই রায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার রক্ষার জন্য। কারও ব্যক্তিগত সুবিধা দেওয়া উদ্দেশ্য নয়।” গত এপ্রিলে দেওয়া রায়ে শিক্ষাকর্মীদের পরিবর্তে যোগ্য শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। আদালতের মতে, “শিক্ষার মান বজায় রাখতে জালিয়াতির শিকার হওয়া পদগুলি পুনরায় যোগ্য প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করা অপরিহার্য।” রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন নিয়োগে ডিজিটাল পদ্ধতি ও তৃতীয় পক্ষের তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।

সমাজে প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ:
এই সিদ্ধান্তে চাকরিচ্যুতদের একাংশ হতাশা প্রকাশ করলেও, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের অনেকেই আদালতের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, নিয়োগে দুর্নীতি শিক্ষাব্যবস্থার ভিতকে দুর্বল করে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ। তবে, বাতিল হওয়া শিক্ষকদের একটি বড় অংশ দাবি করছেন, তাঁদের অনেকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা ভুল তদন্তের শিকার। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্টের রায় চূড়ান্ত হওয়ায় এখন রিট পিটিশন বা রিভিউ পিটিশন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে হাজারো শূন্য পদে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে, যা শিক্ষাব্যবস্থায় তাৎক্ষণিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের পরবর্তী ধাপ:
আদালতের নির্দেশনা অনুসারে, এসএসসি এখন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তৃতীয় পক্ষের অডিটিং এবং বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের মতো প্রযুক্তিগত সমাধান নিয়ে এগোচ্ছে। এছাড়াও, ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম রোধ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করছে। এই সিদ্ধান্ত শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারাদেশেই সরকারি নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here