This Post Contents
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শিক্ষকদের দুশ্চিন্তা: টেট কি সকলের জন্য বাধ্যতামূলক?
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় দেশের হাজার হাজার শিক্ষকের মনে দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে। এই রায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ বা পদোন্নতির জন্য টেট (TET is mandatory for Inservice) উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম শুধু নতুন শিক্ষকদের জন্য নয়, বরং বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ সামনে এসেছে—টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট (TET) কে সকল শিক্ষকের জন্য বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত। এই বিষয়ে সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার স্বার্থে মাননীয় সুপ্রিম কোর্টকে একটি চিঠি প্রদান করা হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতীতে নিয়ম মেনে নিয়োগপ্রাপ্ত বহু শিক্ষক হঠাৎ পরিবর্তিত নীতির কারণে চাকরির সংকটে পড়তে পারেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কেন এমন সিদ্ধান্ত?
আদালতের মতে, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। টেট-এর মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতার একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড বজায় রাখা সম্ভব। তাই শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এই (TET is mandatory for Inservice) পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

রায়ের (TET is mandatory for Inservice) মূল বক্তব্য ও এর প্রভাব
১. পুরনো শিক্ষকদের উপর প্রভাব: অনেক শিক্ষক দীর্ঘ বছর আগে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী চাকরি পেয়েছেন। এই রায়ের ফলে হঠাৎ করে তাদের উপর নতুন শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা তাদের কর্মজীবনকে সংকটে ফেলেছে।
২. অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়ন: পর্ষদীয় বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত বহু শিক্ষকের কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সীমিত সম্পদ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তারা গ্রামীণ ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। হঠাৎ করে তাদের অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাই করাকে অনেকে অযৌক্তিক মনে করছেন।
৩. বয়সজনিত অসুবিধা: অনেক শিক্ষক ২০-২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। এই বয়সে আবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যন্ত কঠিন। এতে বহু শিক্ষক চাকরি হারাতে পারেন।
৪. শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি: যদি বিপুল সংখ্যক অভিজ্ঞ শিক্ষক চাকরি হারান, তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র ও গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীরা।
৫. আর্থিক ও পারিবারিক সংকট: অনেক শিক্ষক বিভিন্ন ধরনের ঋণ (যেমন: শিক্ষা বা গৃহঋণ) শোধ করছেন। চাকরি চলে গেলে তাদের এবং তাদের পরিবারের জীবন চরম সংকটে পড়বে।
সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আবেদন ও বিকল্প প্রস্তাব
এই (TET is mandatory for Inservice) রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কিছু আবেদন ও বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে:
- বিকল্প ব্যবস্থা: কর্মরত শিক্ষকদের জন্য টেটের পরিবর্তে সহজ প্রশিক্ষণ বা রিফ্রেশার কোর্সের ব্যবস্থা করা হোক।
- কেবল নতুন শিক্ষকদের জন্য নিয়ম: টেট-এর এই নিয়ম শুধু নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কার্যকর করা হোক।
- নতুন করে চাকরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি না করে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের জন্য সহজ প্রশিক্ষণ বা রিফ্রেশার কোর্সের সুযোগ দেওয়া হোক।
এই ধরনের পদক্ষেপ নিলে একদিকে যেমন শিক্ষার মানোন্নয়নের আদালতের উদ্দেশ্য পূরণ হবে, তেমনি হাজার হাজার শিক্ষক ও তাদের পরিবারকে অন্যায়ের মুখোমুখি হতে হবে না। একটি ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্তই শিক্ষকদের জীবন ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারবে। আদালতের উদ্দেশ্য সফল করার পাশাপাশি হাজার হাজার শিক্ষক ও তাদের পরিবারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।