WB SIR 2025-পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন: ডিসেম্বর থেকে শুরু?

wb-sir-2025
wb-sir-2025

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার (WB SIR 2025) তালিকার বিশেষ সংশোধন: ডিসেম্বর থেকে শুরু?

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন ((WB SIR 2025)) নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে এই কাজ শুরু করতে পারে বলে খবর। সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে শুনানিতে রাজ্য সরকার ও মামলাকারীদের আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে এই প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ভোটার তালিকার সংশোধন কী?

ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন বা SIR হলো নির্বাচন কমিশনের একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো, মৃত বা অবৈধ নাম বাদ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নতুন ও যোগ্য ভোটারদের নাম যোগ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে আগামী ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন। তাই এই সংশোধন নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও নির্ভুল করতে গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়া প্রথমে অনলাইনে আবেদন নিয়ে শুরু হবে। এরপর বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করবেন। যদি কোনো ভুয়ো তথ্য বা জাল ভোটার কার্ড পাওয়া যায়, তবে এফআইআর দায়ের করা হবে।

সুপ্রিম কোর্টে কী হলো?

১৪ আগস্ট ২০২৫-এ সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে শুনানি হয়। মামলাকারীর আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার সংশোধন শুরু করতে চলেছে।” তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিহারে তাড়াহুড়ো করে সংশোধন করা হয়েছে, যার ফলে ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। বাংলায় এমন তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। তিনি পরামর্শ দেন, নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগে এই প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।

রাজ্য সরকারের আইনজীবী গোপাল শঙ্কর নারায়ণন জানান, নির্বাচন কমিশন ৮ আগস্ট রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে SIR শুরুর কথা জানিয়েছে। তবে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব প্রশ্ন তুলেছেন, কেন রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “রাজ্যের বাসিন্দাদের এই প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।”

তৃণমূল কংগ্রেসের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বাংলায় ইতিমধ্যেই কিছু নাম বাদ দেওয়া শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে অনেক নাম বাদ পড়েছে, এমনকি তিনজন ব্যক্তি হাইকোর্টের সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া নিয়ে স্বচ্ছতা দরকার।

বিচারপতিরা বলেন, বাংলায় এখনো কিছু শুরু হয়নি। তারা বর্তমানে বিহারের বিষয়ে আলোচনা করছেন। তবে বিহারে যে নিয়ম প্রয়োগ হচ্ছে, তা বাংলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

রাজ্য সরকারের আইনজীবীর বক্তব্য

রাজ্য সরকারের আইনজীবী গোপাল শঙ্কর নারায়ণন স্পষ্ট করেন, কোনো ভোটার যিনি একাধিক নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, তাঁর নাম শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট তারিখের ভিত্তিতে বাদ দেওয়া যায় না। নাম বাদ দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কারণ থাকতে হবে। তিনি বলেন, “ভোটার তালিকায় একবার নাম থাকলে তা সহজে বাদ দেওয়া যায় না। এমনকি কেউ জেলে থাকলেও তাঁর নাম বাদ দেওয়া যাবে না।”

তৃণমূলের আপত্তি

তৃণমূল কংগ্রেস এই সংশোধন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, ২০২৪ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি করে এই সংশোধন করা উচিত। ২০০৩ সালের তালিকা ব্যবহার করলে অনেক বৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে। তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং অরূপ বিশ্বাস নির্বাচন কমিশনের কাছে এই দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

ভোটারদের জন্য করণীয়

ভোটারদের এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া উচিত। আপনার নাম তালিকায় আছে কি না, তা যাচাই করুন। প্রয়োজনীয় নথি, যেমন আধার কার্ড, পাসপোর্ট, জন্ম সনদ, রেশন কার্ড বা বিদ্যুৎ বিল, হাতের কাছে রাখুন। অনলাইনে NVSP পোর্টাল বা Voter Helpline অ্যাপের মাধ্যমে নাম যাচাই করা যায়। ভুল থাকলে সংশোধনের জন্য আবেদন করুন। স্থানীয় বুথ লেভেল অফিসার বা নির্বাচন কমিশনের হেল্পলাইনের সাহায্য নিন।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সংশোধন?

পশ্চিমবঙ্গে ২৩ বছর পর এই ধরনের বড় সংশোধন হচ্ছে। শেষবার এটি হয়েছিল ২০০২ সালে। নির্বাচন কমিশন চায় ভোটার তালিকা স্বচ্ছ ও ভুলমুক্ত হোক। এর ফলে ভুয়ো নাম বাদ যাবে এবং নতুন ভোটারদের নাম যুক্ত হবে। তবে বিহারে ৬৫ লাখ নাম বাদ পড়ায় অনেকে উদ্বিগ্ন। বাংলায় এমন না হয়, সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।

সম্ভাব্য সময়সীমা

নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী(WB SIR 2025):

  • আগস্ট ২০২৫: অনলাইন আবেদন শুরু।
  • সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০২৫: বাড়ি বাড়ি যাচাই।
  • নভেম্বর ২০২৫: খসড়া তালিকা প্রকাশ।
  • ডিসেম্বর ২০২৫: চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ।

WB SIR 2025-পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন: ডিসেম্বর থেকে শুরু?

wb-sir-2025
wb-sir-2025

কী নথি লাগবে(WB SIR 2025)?

নির্বাচন কমিশন ১১টি নথি গ্রহণ করবে, যেমন:

  • আধার কার্ড
  • পাসপোর্ট বা প্যান কার্ড
  • জন্ম সনদ বা মাধ্যমিক সার্টিফিকেট
  • ঠিকানার প্রমাণ (বিদ্যুৎ বিল, রেশন কার্ড)
  • পারিবারিক ভোটার কার্ডের কপি

আপনার জন্মসালের উপর নির্ভর করে নথির সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে:

  • ১৯৮৭-এর আগে জন্ম: একটি নথি।
  • ১৯৮৭-২০০২: দুটি নথি (নিজের এবং বাবা/মায়ের)।
  • ২০০২-এর পর: তিনটি নথি (নিজের, বাবা ও মায়ের)।

উপসংহার(WB SIR 2025):

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন নিয়ে আলোচনা চলছে। নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে তৃণমূলের আপত্তি এবং সুপ্রিম কোর্টের শুনানি এই প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করেছে। ভোটারদের উচিত নিজের নাম যাচাই করা এবং প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত রাখা। ডিসেম্বর ২০২৫-এ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নজর রাখুন এবং প্রয়োজনে স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here