School holiday increase due to heat wave:- 🔥গরমের জন্য স্কুলে ছুটি বৃদ্ধি: বিভিন্ন রাজ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত ও বাংলার অবস্থা

School holiday increase due to heat wave:- ভারতে এই মুহূর্তে চলমান তীব্র গরমে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মে মাসের শেষভাগ থেকে শুরু করে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের বেশিরভাগ রাজ্যে তাপমাত্রা ৪৪–৪৮ ডিগ্রির ঘরে পৌঁছেছে। তারই প্রেক্ষিতে দেশের একাধিক রাজ্য সরকার স্কুলে গরমের ছুটি বৃদ্ধি করেছে। ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, দিল্লি, পঞ্জাব, হরিয়ানা সহ প্রায় ১০টিরও বেশি রাজ্যে ছুটি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও স্পষ্ট করে কিছু ঘোষণা না করায় রাজ্যবাসীর মধ্যে প্রশ্ন উঠছে — বাংলার ছেলেমেয়েদের জীবন কি কম মূল্যবান?

দিনের পর দিন ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা, রোদের তেজ ও জলঘাটতির কারণে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে দেশের বহু রাজ্য স্কুলে অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, দিল্লি, পঞ্জাব, ও হরিয়ানা ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাতেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি — ফলে অভিভাবক ও শিক্ষকমহলে প্রশ্ন উঠছে: “বাংলা কি পিছিয়ে যাচ্ছে?”

রাজ্য	গরমের ছুটি শেষ হবে	নোট
ছত্তিশগড়	২৫ জুন	সরকারি ও বেসরকারি সব স্কুলে প্রযোজ্য
মধ্যপ্রদেশ	১৫ জুন	তাপপ্রবাহজনিত সতর্কতা জারি
রাজস্থান	৩০ জুন	মরুপ্রদেশ হওয়ায় অতিরিক্ত ছুটি
উত্তরপ্রদেশ	১৫ জুন	অধিকাংশ জেলায় তাপমাত্রা ৪৬° সেলসিয়াসের ওপরে
বিহার	২১ জুন	স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শে সিদ্ধান্ত
দিল্লি	৩০ জুন	সমস্ত সরকারি ও অনুমোদিত বেসরকারি স্কুল
পঞ্জাব	৩০ জুন	হিটস্ট্রোক রোধে এই সিদ্ধান্ত
হরিয়ানা	৩০ জুন	চূড়ান্ত ছুটির সূচি ঘোষণা
ওড়িশা	২০ জুন	ইতিমধ্যে গরমের ছুটি চলছে
ঝাড়খণ্ড	১৮ জুন	ছুটি বাড়ানো হয়েছে ২য় দফায়

এই তালিকা থেকেই বোঝা যায় যে দেশের প্রায় সমস্ত রাজ্য যেখানে এই অস্বাভাবিক গরমের কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই সতর্কতা অবলম্বন করছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ কিছুটা ব্যতিক্রম।

🏫 পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি কেমন?

পশ্চিমবঙ্গেও তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছেন মানুষ। দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায় তাপমাত্রা প্রতিদিন ৪১-৪৪ ডিগ্রির মধ্যে উঠছে। পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বীরভূমের মতো জায়গায় দিনের শুরুতেই সূর্যের তেজ চোখে পড়ার মতো। শহর কলকাতাও ব্যতিক্রম নয়।তবে এতকিছুর পরেও এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকার গরমের কারণে অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করেনি। সরকারিভাবে ছুটি ছিল ২ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত — কিন্তু জুনে বিদ্যালয় খুলতেই তীব্র গরমে পড়ুয়াদের কষ্ট হতে শুরু করেছে। কিন্তু ছুটি শেষ হওয়ার পরেও রাজ্যের বহু জেলায় লু বইছে এবং হিটস্ট্রোকের খবর পাওয়া যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি। তবুও এখনও পর্যন্ত নতুন করে ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি।

🤒 ছাত্রছাত্রীদের ওপর প্রভাব

চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের শরীর প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল। এই গরমে স্কুলে যাওয়া, টিফিন না খাওয়া, জল না পাওয়া কিংবা রোদে হাঁটার ফলে শিশুদের হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, মাথাব্যথা, বমি, অসুস্থতা বাড়ছে।

বহু অভিভাবক ও স্কুল শিক্ষক জানাচ্ছেন, কয়েকটি স্কুলে ক্লাসে ছাত্র উপস্থিতির হার ৩০%-৪০% নেমে এসেছে। অনেক বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, বারবার হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

🧑‍🏫 শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্বেগ:

শিক্ষক সংগঠন এবং অভিভাবক মহল বারবার সরকারের কাছে ছুটি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, “স্কুলের ভেতরে ভেন্টিলেশন নেই, পাখাও ঠিকভাবে কাজ করে না, তাতে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।”

এক অভিভাবক বলছেন,

“সকালে ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত স্কুল। এই সময়টাই সবচেয়ে গরম থাকে। ছোট ছোট বাচ্চারা কীভাবে সহ্য করবে?”

শিক্ষকরা বলছেন, যেসব স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না হয়, সেগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। রান্নাঘরের গরমে পরিবেশ দূষিত হয়, যার প্রভাব পড়ে ছাত্রছাত্রীদের শরীরে।

📌 চিকিৎসকদের মতামত:

চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, এই রকম চরম তাপপ্রবাহে শিশুদের স্কুলে পাঠানো অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন,

“এই গরমে ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক ও ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষত যেসব স্কুলে শীততাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই, সেখানে শিশুদের অতিরিক্ত ঝুঁকি থাকে।”

🏛️সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন:

এখানেই উঠছে মূল প্রশ্ন— যখন দেশের অন্যান্য রাজ্য প্রয়োজনে ছুটি বাড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করছে, তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কীভাবে নিশ্চুপ থাকতে পারে?

রাজ্যের শিক্ষা দফতর বলেছে,

“আমরা আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”

কিন্তু জনমানসে এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ গরমের প্রকোপ ইতিমধ্যেই প্রমাণিত, এবং অন্যান্য রাজ্য তৎপরতা দেখিয়েছে। এমনকি কিছু বেসরকারি স্কুল নিজেরাই ১৫ জুন বা ২০ জুন পর্যন্ত ছুটি বাড়িয়ে নিচ্ছে।

সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ:

সামাজিক মাধ্যমেও এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা গেছে। টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে বহু অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলছেন সরকারের এই “নীরবতা” নিয়ে। অনেকে #SchoolHolidayWB হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে পোস্ট করছেন।

একজন অভিভাবক টুইটে লিখেছেন,

“পশ্চিমবঙ্গের বাচ্চারা কি রোবট? তাদের শরীরে গরমের প্রভাব পড়ে না?”

✅ আমাদের পরামর্শ-করণীয় ও সুপারিশ:

1. অবিলম্বে ছুটি বাড়ানোর নির্দেশ জারি করা দরকার, অন্তত ১৫ জুন পর্যন্ত।
2. স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক করতে হবে — বিশুদ্ধ পানীয় জল, শীতল শ্রেণিকক্ষ, পর্যাপ্ত পাখা প্রভৃতি নিশ্চিত করতে হবে।
3. স্কুলে অতি জরুরি না হলে মিড-ডে মিল রান্না বন্ধ রাখা যেতে পারে এই সময়ে।
4. অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া উচিত শিশুকে জলখাবার ও পর্যাপ্ত জল সঙ্গে দিয়ে পাঠানোর জন্য।
5. যেসব জেলায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের বেশি, সেখানে জেলার প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে ছুটি ঘোষণা করার ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে।
6. শিশুদের রোদে বের না করা, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে।
7. প্রচুর জল ও ORS খাওয়ানো।
8. হালকা সুতির জামা পরানো।
9. স্কুলে পাঠালে ছাতা, জল এবং হালকা খাবার সঙ্গে দেওয়া।

📌 উপসংহার

গ্রীষ্মকাল ভারতের জন্য চিরকালই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু ২০২৫ সালের এই তীব্র তাপপ্রবাহ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। যেখানে দেশজুড়ে সরকার গুলি সাহসী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও দ্বিধায় রয়েছে। শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কোনও রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় নয় — এটি মৌলিক মানবিক প্রশ্ন।

এই মুহূর্তে সর্বাধিক প্রয়োজন হল — সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত। সমাজের পক্ষ থেকে চাপ বাড়লে হয়তো প্রশাসন নড়ে বসবে। এই নিয়ে শিক্ষকদের সংগঠন, অভিভাবক ফোরাম এবং ছাত্রছাত্রীদের আরও ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে।

❓ প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)