সম্প্রতি ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রায়ের অর্ডার কপি প্রকাশের খবর রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এটি কেবল একটি প্রশাসনিক ঘোষণা নয়, বরং বহু প্রতীক্ষিত মহার্ঘ ভাতা (DA) প্রাপ্তির আইনি লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো ও মহার্ঘ ভাতা (DA) নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ ও আইনি টানাপোড়েন চলছে। বিশেষ করে, ROPA ২০১৯-এ ডিএ-র উল্লেখ না থাকায় এবং কেন্দ্রীয় হারে ডিএ না দেওয়ায় কর্মচারীরা বারবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের ১৭ জুন, ২০২৫-এর নির্দেশ (WPA No.26668 of 2024) এই পরিস্থিতিতে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

ROPA ২০১৯ এবং মহার্ঘ ভাতার জটিলতা

রাজ্যের অর্থ দপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত ROPA ২০১৯ অর্ডারে মহার্ঘ ভাতার স্পষ্ট উল্লেখ না থাকায় বর্তমান সরকার কেন্দ্রীয় হারে ডিএ না দেওয়ার যে অবস্থান নিয়েছে, তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই অনুপস্থিতির কারণে আইনি লড়াইয়ে সরকারি কর্মীদের দাবি দুর্বল হয়ে পড়ছিল। ফলস্বরূপ, যদি বেতন কমিশনের সুপারিশে ডিএ প্রদানের কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকে, তবে তা সরকারি কর্মীদের ডিএ ব্যবধান মেটানোর জন্য করা মামলাকে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি শক্তিশালী করবে।

আদালতের নির্দেশের সারাংশ

সংযুক্ত চিত্রে দেখা যাচ্ছে, মামলাকারী ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই তথ্য এখনও পাবলিক ডোমেইনে নেই। বিচারপতি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন—

  • ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশের রিপোর্ট সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
  • মামলাটি ফের শুনানির জন্য ১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
  • অর্থ দপ্তরের RTI সেলের রিপোর্ট ও সার্ভিস অ্যাফিডেভিট নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে।

রায়ের তাৎপর্য ও কর্মীদের প্রত্যাশা

হাইকোর্টের এই নির্দেশ রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই রিপোর্ট প্রকাশিত হলে কর্মীরা জানতে পারবেন, বেতন কমিশন ঠিক কী কী সুপারিশ করেছিল। বিশেষ করে, মহার্ঘ ভাতার বিষয়ে কমিশনের সুপারিশ জানা গেলে, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাওয়ার দাবি আরও জোরালো হবে। এটি কেবল নৈতিক দাবি নয়, বরং আইনি ভিত্তিও পাবে। বর্তমানে ROPA ২০১৯-এ ডিএ-র কোন উল্লেখ নেই। ফলে, শুধুমাত্র এই অর্ডারকে ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দাবির মামলা আদালতে খুব শক্তিশালী হয় না। এই কারণে, কর্মচারীদের দাবি আইনি শক্তি হারাচ্ছিল।

বর্তমানে, রাজ্য সরকারি কর্মীরা অধীর আগ্রহে ১লা জুলাই, ২০২৫ তারিখের দিকে তাকিয়ে আছেন। এই দিন এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে এবং আশা করা যায়, রাজ্য সরকার রিপোর্ট প্রকাশের বিষয়ে তাদের পদক্ষেপ আদালতে জানাবে। এই তারিখটি শুধুমাত্র একটি শুনানির দিন নয়, এটি লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মীর জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে, যেখানে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবেন।

এই রায় প্রকাশের মাধ্যমে মহার্ঘ ভাতার আইনি লড়াইয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এখন দেখার পালা, আগামী দিনে রাজ্য সরকার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় এবং সরকারি কর্মীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ডিএ প্রাপ্তির স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়িত হয়।

ষষ্ঠ বেতন কমিশন রিপোর্টের গুরুত্ব

যদি ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশে স্পষ্টভাবে ডিএ প্রদানের কথা উল্লেখ থাকে, তাহলে সেই রিপোর্টকে ভিত্তি করে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র জন্য মামলা করতে পারবেন। কারণ—

  • কমিশনের সুপারিশ: কমিশনের রিপোর্ট সরকারী নথি হিসেবে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
  • আইনি ভিত্তি: কমিশনের সুপারিশে ডিএ-র উল্লেখ থাকলে, আদালতে তা আরও বেশি বলবান হবে।
  • স্বচ্ছতা: কর্মচারীরা জানতে পারবেন, কমিশন আসলে কী সুপারিশ করেছিল— বিশেষত ডিএ সংক্রান্ত অংশ।

এই রায়ের তাৎপর্য

  • কর্মচারীদের স্বার্থে বড় পদক্ষেপ: রিপোর্ট প্রকাশ হলে কর্মচারীরা সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের অধিকার ও দাবির বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
  • আইনি লড়াইয়ে নতুন দিশা: রিপোর্টে ডিএ-র সুপারিশ থাকলে, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবির মামলা আদালতে অনেক বেশি জোর পাবে।
  • পরবর্তী শুনানির দিকে নজর: ১ জুলাই, ২০২৫-এ মামলার পরবর্তী শুনানিতে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ ও রিপোর্ট প্রকাশ নিয়ে আপডেট আসবে।

উপসংহার

কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গের লক্ষাধিক সরকারি কর্মচারীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ষষ্ঠ বেতন কমিশন রিপোর্ট প্রকাশিত হলে, বিশেষত মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত সুপারিশ স্পষ্ট হলে, কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবির আইনি ভিত্তি অনেক শক্তিশালী হবে। এখন সকলের নজর ১ জুলাই, ২০২৫-এর শুনানির দিকে, যেখানে রাজ্য সরকার রিপোর্ট প্রকাশের বিষয়ে তাদের অবস্থান জানাবে।

Download Report-Click Here

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here