WBSSC-‘টেন্টেড’ চিহ্নিত করে অ্যাডমিট কার্ড বাতিল: এসএসসির পদক্ষেপ ও বিতর্ক!

SSC-26000
SSC-26000

‘টেন্টেড’ চিহ্নিত করে অ্যাডমিট কার্ড বাতিল: এসএসসির পদক্ষেপ ও বিতর্ক

কলকাতা, আগস্ট ১৬: এসএসসি-র ২০১৬ সালের প্রথম এসএলএসটি পরীক্ষার পর থেকে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে চলা দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে এবার নতুন মোড় এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) কয়েকশো প্রার্থীর আবেদন খারিজ করেছে, যাঁদেরকে ‘টেন্টেড’ (দুর্নীতিগ্রস্ত) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রার্থীরা নতুন পরীক্ষার জন্য অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতে গিয়ে দেখেন যে তাঁদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় পাঁচ লক্ষ ৮০ হাজার প্রার্থীর প্রভিশনাল অ্যাডমিট কার্ড আপলোড করেছে এসএসসি, কিন্তু একই সাথে তাদের পক্ষ থেকে একটি বেনজির নোটিসও প্রকাশিত হয়েছে। এই নোটিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে সকল প্রার্থীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে, তারা কেন বাতিল হয়েছে তার কারণ ওয়েবসাইটে জানতে পারবেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ‘অযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিতদের আবেদনপত্রই বাতিল করা হয়েছে।


আদালতের নির্দেশ, কমিশনের পদক্ষেপ

২০১৬ সালের নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ২০৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের একটি আবেদনের ভিত্তিতে, সুপ্রিম কোর্ট ১৫ হাজার ৪০৩ জন ‘যোগ্য’ প্রার্থীকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল।

তবে, যে ১,৮০০ জন প্রার্থীর নাম এই তালিকায় ছিল না, তাঁদের মধ্যে যাঁরা শূন্য পেয়েছিলেন, র‍্যাঙ্ক জাম্প করেছিলেন, অথবা প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন, আপাতত তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড বাতিল করা হয়েছে।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ গত বছর এই ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় দেওয়ার সময় মন্তব্য করেছিল, ‘চাল থেকে কাঁকর আলাদা করতে না পারায় পুরো প্যানেলই খারিজ করা হয়েছে।’ যদিও এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।


‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারার অভিযোগ

নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলাকারী প্রার্থীদের একাংশ মনে করছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কমিশন একই সাথে দুটি লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে আদালতে দাবি করে আসছিল যে, সফল প্রার্থীদের ‘ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন’ ছাড়া সমস্ত ‘অযোগ্য’ প্রার্থীকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এখন প্রভিশনাল অ্যাডমিট কার্ড বাতিল করে এসএসসি হয়তো নতুন করে মামলা হওয়ার পথ বন্ধ করতে চাইছে। কারণ, যদি নতুন করে মামলা হয়, কমিশন তখন বলতে পারবে যে তারা ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের অ্যাডমিট কার্ড বাতিল করে দিয়েছে।

কমিশনের পক্ষ থেকে অ্যাডমিট কার্ডের নোটিসে আরও বলা হয়েছে যে, ‘কমিশনের আইন, বিধি এবং আদালতের রায় মেনে শারীরিক অথবা অনলাইন ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে এবং পরবর্তী পর্যায়ে কাউন্সেলিং পর্যন্ত যোগ্যতা যাচাই চলবে।’ এই মন্তব্যের মাধ্যমে এসএসসি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে টেন্টেডদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

এই পদক্ষেপ শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘদিনের বিতর্কের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে। তবে, এই প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here