This Post Contents
কর্মচারী পিছু বকেয়া ডিএ হিসাব: নবান্নর প্রযুক্তি ব্যবহার,
সরকারি কর্মচারীদের আশা ও প্রত্যাশা
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ
ভূমিকা
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance বা ডিএ) নিয়ে এক নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের প্রধান কার্যালয় নবান্ন, এই বকেয়া ডিএ-এর সঠিক এবং দ্রুত হিসাব নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভর করছে। এই নিবন্ধে আমরা বকেয়া ডিএ কী, নবান্ন কীভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করে এই জটিল হিসাব প্রক্রিয়াকে সহজ ও স্বচ্ছ করছে, সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশিকা এবং সরকারি কর্মচারী মহলের সার্বিক প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই প্রক্রিয়াটি শুধু আর্থিক লেনদেনকে সহজ করবে না, বরং সরকারি কর্মপরিচালনায় প্রযুক্তির ভূমিকাকেও এক নতুন মাত্রা দেবে।
দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ডিএ হারে বিস্তর পার্থক্য চলে আসছিল, যা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। বর্তমান উদ্যোগের লক্ষ্য হল এই ব্যবধান ঘুচিয়ে কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা এবং একইসাথে প্রক্রিয়াটিকে ত্রুটিমুক্ত ও সময়োপযোগী করে তোলা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও আইনি প্রেক্ষাপট
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ নিয়ে চলমান বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টের একটি সাম্প্রতিক নির্দেশিকা এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দিয়েছে। ১৬ মে, ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএর ২৫% ছয় সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এটি কর্মচারীদের জন্য একটি বড় স্বস্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ন্যায্য পাওনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
- নির্দেশনা: ১৬ মে, ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় যে, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএর ২৫% ছয় সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে।
- অগ্রগতি প্রতিবেদন: আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে যে, চার সপ্তাহের মধ্যে এই পদক্ষেপের অগ্রগতি সম্পর্কে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
- সুবিধাভোগী: মূলত ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কর্মরত কর্মচারীরাই এই নির্দেশনার আওতায় আসবেন। একই সময়কালে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও এর সুবিধা পাবেন।
- পরবর্তী পদক্ষেপ: প্রথম দফায় ২৫% বকেয়া ডিএ পরিশোধের পর বাকি পাওনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানির ওপর নির্ভর করবে।
এই নির্দেশিকা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে এবং রাজ্য সরকারের উপর এই বকেয়া দ্রুত পরিশোধের চাপ সৃষ্টি করেছে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে এই অগ্রগতি সরকারি কর্মচারীদের অধিকার রক্ষায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কীভাবে হিসাব হবে বকেয়া ডিএ?
মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance বা DA) সরকারি কর্মচারীদের বেতনের একটি অপরিহার্য অংশ, যা মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করে। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ডিএ হারের পার্থক্যের কারণে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ একটি জটিল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বকেয়া ডিএ হিসাবের মূল সূত্রটি বোঝা জরুরি:
মাসিক বকেয়া ডিএ = (মাসিক বেসিক পে × ডিএ-এর হারের পার্থক্য %)
মোট বকেয়া ডিএ = এপ্রিল ২০০৮ – ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিটি মাসের বকেয়া ডিএ যোগফল
প্রাপ্য ২৫% = মোট বকেয়া ডিএ × ২৫%
এই হিসাব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়, কারণ এটি কর্মচারীর মূল বেতন (Basic Pay), চাকরির মেয়াদ এবং সেই সময়কার রাজ্য ও কেন্দ্রীয় ডিএ হারের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে।
উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক একজন কর্মচারীর মূল বেতন ₹৩০,০০০ টাকা। যদি রাজ্য ডিএ হার ১০% হয় (অর্থাৎ ₹৩,০০০ টাকা) এবং কেন্দ্রীয় ডিএ হার ৫০% হয় (অর্থাৎ ₹১৫,০০০ টাকা), তাহলে মাসিক বকেয়া ডিএ হবে ₹১৫,০০০ – ₹৩,০০০ = ₹১২,০০০ টাকা। যদি এই বকেয়া ৩ বছরের জন্য প্রাপ্য হয় (অর্থাৎ ৩৬ মাস), তাহলে মোট বকেয়া ডিএ হবে ₹১২,০০০ × ৩৬ = ₹৪,৩২,০০০ টাকা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, আপাতত এই মোট বকেয়া ডিএর ২৫% অর্থাৎ ₹১,০৮,০০০ টাকা পরিশোধ করা হবে। এই পদ্ধতি একটি দীর্ঘ সময়ের হিসাবকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সহজ করে তুলছে।
আপনি যদি ২০০৮-২০১৯ সালের পুরোনো ডিএ বকেয়া হিসাব করতে চান, আমাদের অনলাইন পুরোনো ডিএ এরিয়ার ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারেন।
নবান্নের প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ: নির্ভুল ও দ্রুত হিসাবের পথে
বকেয়া ডিএ হিসাবের এই বিশাল ও জটিল প্রক্রিয়াকে নির্ভুল এবং দ্রুত করতে নবান্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। একটি বেসরকারি সংস্থাকে এই বিশেষ প্রযুক্তিগত সিস্টেম নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি কর্মচারীদের তাদের প্রাপ্য বকেয়া ডিএ-এর পরিমাণ সহজেই জানতে সহায়তা করা। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সরকারি কর্মপরিচালনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
কিভাবে কাজ করবে এই সিস্টেম?
- ✓ কর্মচারীরা রাজ্য সরকারের নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থাপনা পোর্টাল IFMS (Integrated Financial Management System)-এ লগ ইন করবেন।
- ✓ ২০০৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তাদের কর্মকালের বিস্তারিত তথ্য, যেমন মূল বেতন, গ্রেড পে, এবং অন্যান্য ভাতা সম্পর্কিত ডেটা প্রদান করবেন।
- ✓ সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ডেটা বিশ্লেষণ করে প্রতিটি কর্মচারীর বকেয়া ডিএর সঠিক পরিমাণ হিসাব করবে।
- ✓ এই স্বয়ংক্রিয় হিসাবের ফলে ম্যানুয়াল ত্রুটির সম্ভাবনা কমে যাবে এবং সময় সাশ্রয় হবে।
কে কে ব্যবহার করতে পারবেন?
- ✓ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সকল দপ্তরের কর্মরত কর্মচারীরা।
- ✓ সরকার অনুমোদিত ও স্বশাসিত সংস্থার সকল কর্মী।
- ✓ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মচারী।
- ✓ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ২০০৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যারা অবসর গ্রহণ করেছেন, তারাও এই IFMS পোর্টালে তথ্য প্রদান করে তাদের বকেয়া ডিএ জানতে পারবেন।
নবান্নের এই প্রযুক্তিগত উদ্যোগের মধ্যে বেশ কয়েকটি আধুনিক দিক রয়েছে:
- ডিজিটাল ডাটাবেস: কর্মচারীদের বেতন, চাকরির মেয়াদ, ডিএ রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য একটি সুরক্ষিত ও কেন্দ্রীভূত ডিজিটাল ডাটাবেসে সংরক্ষণ করা হবে। এটি তথ্যের সহজলভ্যতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
- অটোমেটেড সফটওয়্যার: বকেয়া ডিএ হিসাবের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা স্বয়ংক্রিয় ক্যালকুলেটর সফটওয়্যারটি জটিল গণিতকে সহজ করে দেবে, যার ফলে ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ার সময় ও ত্রুটি কমে যাবে।
- এআই ও ডেটা অ্যানালিটিক্স: বড় আকারের ডেটা বিশ্লেষণ (Big Data Analytics) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির ব্যবহার বকেয়া হিসাবকে আরও দ্রুত ও নির্ভুল করবে। এটি ডেটার প্যাটার্ন শনাক্ত করতে এবং ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিগুলি চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে।
- অনলাইন পোর্টাল: কর্মচারীরা একটি সুরক্ষিত অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে নিজেদের বকেয়া স্ট্যাটাস এবং হিসাবের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। এটি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনবে এবং কর্মচারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে।
এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে হিসাবে ভুল কমছে, সময় বাঁচছে এবং স্বচ্ছতা বাড়ছে, যা সরকারি কর্মচারীদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং সমগ্র প্রক্রিয়াটিকে আরও সুশৃঙ্খল করেছে।
প্রক্রিয়ার সময়রেখা ও বাস্তবায়ন
বকেয়া ডিএ পরিশোধের এই প্রক্রিয়াটি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ধাপে বিভক্ত, যা নবান্ন কর্তৃক গৃহীত প্রযুক্তিগত উদ্যোগকে সফল করতে সহায়তা করবে:
প্রথম পর্যায়: প্রযুক্তিগত পদ্ধতি নির্মাণ
একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি বিশেষ সফটওয়্যার সিস্টেম ডেভেলপ করার জন্য, যা কর্মচারীদের ডেটা ম্যানেজ এবং বকেয়া ডিএ হিসাব করতে সক্ষম হবে। এই পর্যায়টি সঠিক এবং কার্যকর প্রযুক্তিগত ভিত্তি স্থাপন করবে।
দ্বিতীয় পর্যায়: IFMS পোর্টালে মডিউল সংযোজন
নবান্নের Integrated Financial Management System (IFMS) পোর্টালে এই নতুন ডিএ ক্যালকুলেশন মডিউলটি সংযুক্ত করা হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে, কর্মচারীরা সহজেই তাদের ব্যক্তিগত ডেটা আপলোড এবং তাদের ডিএ হিসাব অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
তৃতীয় পর্যায়: কর্মচারীদের তথ্য প্রদান
সকল সরকারি দপ্তরের কর্মচারী এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা ২০০৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তাদের কর্মচারীদের কর্মকালের যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য IFMS পোর্টালে জমা দেবে। সঠিক এবং সম্পূর্ণ তথ্য জমা দেওয়া এই প্রক্রিয়ার সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থ পর্যায়: স্বয়ংক্রিয়ভাবে বকেয়া ডিএ হিসাব প্রদর্শন
একবার সকল ডেটা আপলোড এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিটি কর্মচারীর জন্য বকেয়া ডিএর পরিমাণ প্রদর্শন করবে। এই হিসাবগুলি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং রাজ্য সরকারের নীতি অনুযায়ী নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হবে।
এই সুসংগঠিত সময়রেখা নিশ্চিত করবে যে, বকেয়া ডিএ পরিশোধের প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
ডিএ হারের তুলনা: রাজ্য বনাম কেন্দ্র
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের ডিএ বকেয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের সাথে রাজ্য সরকারের ডিএ হারের পার্থক্য। নিচে একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলো:
ক্যাটাগরি | ডিএ হার (%) |
---|---|
কেন্দ্রীয় কর্মচারী | ৫৫% (উদাহরণস্বরূপ) |
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কর্মচারী | ১৮% (সর্বশেষ বৃদ্ধি সহ, উদাহরণস্বরূপ) |
বকেয়া ডিএ (২০০৯-২০১৯ সময়কালের জন্য) | ২৫% (সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত প্রথম কিস্তি) |
এই পার্থক্যটি বছরের পর বছর ধরে একটি বড় আর্থিক বোঝা তৈরি করেছে, এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এই বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি কর্মচারী মহলের আশা ও প্রত্যাশা
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া ডিএ-এর দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে আসছেন। নবান্নর এই প্রযুক্তিগত উদ্যোগ এবং সুপ্রিম কোর্টের ইতিবাচক নির্দেশ তাদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এই উদ্যোগগুলি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে:
- দ্রুত বকেয়া পরিশোধের সম্ভাবনা: প্রযুক্তির মাধ্যমে হিসাবের দ্রুততা অর্থ দ্রুত প্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়িয়েছে।
- সঠিক ও ন্যায্য প্রাপ্তি: স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে নির্ভুল হিসাব নিশ্চিত হওয়ায় কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য পাওনা পাবেন বলে আশাবাদী।
- অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে স্বচ্ছতা: নিজেদের ডিএ স্ট্যাটাস অনলাইনে যাচাই করার সুযোগ থাকায় পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।
- আর্থিক স্থিতিশীলতা: বকেয়া ডিএ পরিশোধ হলে বহু কর্মচারীর আর্থিক বোঝা কমবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
- আস্থা বৃদ্ধি: সরকারের এই প্রযুক্তিগত উদ্যোগ এবং আদালতের সক্রিয় ভূমিকা কর্মচারীদের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি করেছে।
সাম্প্রতিক আইনি রায় এবং রাজ্য সরকারের এই প্রযুক্তিগত উদ্যোগ একত্রিতভাবে কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
১. বকেয়া ডিএ আসলে কী?
বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) হল সরকারি কর্মচারীদের বেতনের সেই অংশ, যা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের ঘোষিত ডিএ হারের পার্থক্যের কারণে কর্মচারীদের এখনও পরিশোধ করা হয়নি। এটি মূলত গত কয়েক বছরে জমে থাকা মহার্ঘ ভাতার সমষ্টি।
২. নবান্ন এই বকেয়া ডিএ হিসাবের জন্য কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে?
নবান্ন একটি সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (IFMS Portal), স্বয়ংক্রিয় ক্যালকুলেটর সফটওয়্যার, ডিজিটাল ডাটাবেস এবং ডেটা অ্যানালিটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করছে। এই প্রযুক্তিগুলি ডেটা সংগ্রহ, হিসাব প্রক্রিয়া এবং বকেয়া ডিএ-এর সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ে সহায়তা করবে।
৩. সরকারি কর্মচারীরা কখন তাদের বকেয়া ডিএ হাতে পাবেন?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ১৬ মে, ২০২৫ থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রথম দফার ২৫% বকেয়া ডিএ পরিশোধ করার কথা। অবশিষ্ট বকেয়া সম্পর্কে সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানির ওপর নির্ভর করবে।
৪. কত পরিমাণ বকেয়া ডিএ একজন কর্মচারী পেতে পারেন?
বকেয়া ডিএর পরিমাণ কর্মচারীর মূল বেতন, চাকরির মেয়াদ, এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় ডিএ হারের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, তিন বছরে একজন কর্মচারীর ৪ লাখ টাকার বেশি বকেয়া হতে পারে, যার ২৫% প্রথম কিস্তিতে দেওয়া হবে।
৫. ২০০৯-২০১৯ সালের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও কি এই সুবিধা পাবেন?
হ্যাঁ, ২০০৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যারা অবসর গ্রহণ করেছেন, তারাও IFMS পোর্টালে তাদের তথ্য প্রদান করে বকেয়া ডিএ জানতে ও পেতে পারবেন। এটি এই উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
৬. IFMS পোর্টালে তথ্য প্রদান কি বাধ্যতামূলক?
হ্যাঁ, বকেয়া ডিএ হিসাবের জন্য সকল সরকারি কর্মচারীদের জন্য ২০০৯-২০১৯ সময়কালের তথ্য IFMS পোর্টালে প্রদান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঠিক এবং সময় মতো তথ্য প্রদান নিশ্চিত করবে যে আপনার হিসাব নির্ভুল হবে।
উপসংহার
নবান্নের এই প্রযুক্তিগত উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বকেয়া মহার্ঘ ভাতা পরিশোধের প্রক্রিয়াকে এক নতুন গতি দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এই প্রক্রিয়াকে শুধু দ্রুতই করেনি, বরং এতে অভূতপূর্ব স্বচ্ছতাও এনেছে। এটি কর্মচারীদের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও জীবনযাত্রার মান উন্নতির আশা জাগিয়েছে, যা তাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে।
অর্থ দফতরের একজন আধিকারিক যেমনটি জানিয়েছেন, “এই পদ্ধতিতে যেমন রাজ্য সরকার কত সংখ্যায় কর্মচারীকে কত পরিমাণ বকেয়া দিয়ে দিতে হবে, তা জানতে পারবে, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের কাছে চার সপ্তাহ পর যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা, তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে।” এটি ভবিষ্যতে আরও দক্ষ এবং জবাবদিহিমূলক সরকারি সেবার পথ প্রশস্ত করবে। সর্বশেষ আপডেটের জন্য সরকারি পোর্টাল এবং নির্ভরযোগ্য খবরের ওপর নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি।